কালীপুজোর শেষে, পুজোর আমেজ কেটে গেলেই, হালকা উত্তরে হাওয়া জানান দিয়ে যায়, সে আসিতেছে। কলকাতায় থেকে, আমাদের কাছে শীতকাল হচ্ছে, সোনার পাথরবাটি। কখন আসে আর কখন যায়, বোঝাই দায়। তবু আমাদের উত্তেজনায় ভাটা পড়েনা। ডিসেম্বর মাস পড়লেই, হালকা সোয়েটার বেরিয়ে পড়ে। আর বাঙালির প্লেটে আসে, গুড়ের মুড়কি, মোয়া, নাড়ু আর তিল।
যত সময় যাচ্ছে, আস্তে আস্তে বাড়িতে এইসব বানানোর চল কমছে বটে, কিন্তু ছেলেবেলা ছিল অন্যরকম।

আমার দিদা থাকতেন উত্তরবঙ্গের ফালাকাটা বলে একটি বর্ধিষ্ণু গঞ্জে। আমরা তখন কলকাতায়। সময়টা নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে। শীতের শুরুতেই, কোনো এক শনি কিংবা রোববার সকালে দেখতাম, আমার এক মামা (চার মামা আমার) ভোরের ট্রেন করে আমাদের বাড়িতে এসেছেন। সঙ্গে একটা প্রমাণ সাইজের সর্ষের তেলের টিন। এখন সেইরকমের টিন বাড়িতে আর দেখা যায়না। দিদা অপেক্ষায় থাকতো, চার মামার মধ্য কার কলকাতায় কাজ থাকবে। যেই জানা,অমনি দিদা তার হাতে ধরিয়ে দিত সেই টিনের ডাব্বা। কিন্তু তাতে সর্ষের তেল থাকতো না।
আমার কাছে সে ছিল আলাদিনের চিরাগ। নতুন নতুন লোভনীয় খাবার বেরোত তার থেকে। থাকতো গুড় মাখানো মুড়ি-মুড়কি, আর থাকতো মোয়া (জয়নগরের মতো নয়) আর অনেক অনেক নারকেল নাড়ু আর তিলের নাড়ু। বলাই বাহুল্য, যে আমার মামাদের কি পরিমান দুরবস্থা হতো, রাত্তির ট্রেনে ওই টিন সামলে, কলকাতা পৌঁছে, আমাদের হাতে তুলে দেওয়া। দিদা এরকম অনেক কিছুই পাঠাত, যেমন শীতের শুরুতে ছোট আলু ভরা ডিব্বা। কারণ তার মতে, কলকাতায় সেই জিনিস পাওয়া যায়না। 😊
দিদা গত হয়েছেন প্রায় ১২ বছর। প্রতি শীতেই মায়ের হাতের নাড়ু খাওয়া হয়, কিন্তু সেই ছোট্টবেলার টিন খুলে মুড়ি নাড়ু খাওয়ার স্মৃতিটুকু আজও রয়ে গেছে।
আজ কেন লিখলাম? আজ Google Photos জানান দিল, গত বছর আমার মামাবাড়ি থেকে আবার একটি ছোট্ট টিন এসেছিল, ছেলেবেলার সেই সব স্মৃতি নিয়ে, আমার ছোট্ট হনুমানের জন্য। গত বছর লিখিনি, তাই এই বছর খাতায় সেই স্মৃতি তুলে রাখলাম। মুড়ি নাড়ু মুড়কি হয়তো খেয়ে যাব কিন্তু দার্জিলিং মাইল কিম্বা উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস করে শীতের সময় জানান দেয়ার, সেই সময় ফিরবে না।
থাকবে শুধু স্মৃতি আর এই লেখা।
Nostalgic hoa galam. Khub bhalo laglo.
LikeLike