নাম তার লালিগুরাস

সেই এক সকালের কথা। তখন আছি ফালাকাটা বলে একটা টাউনে।

ঘুম থেকে উঠে দেখি মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ইলশেগুড়ি বৃষ্টি আর সারাদিন কোথাও পালিয়ে যাওয়ার ডাক।
ভাবলাম কোথাও যাবোনা। সারাদিন খালি নির্ভেজাল ল্যাদ। তাতেও মনের উড়ু উড়ু ভাবটা গেলোনা।

আলস্য কাটিয়ে সবাই মিলে তৈরি হলাম, গন্তব্য কোথাও একটা।
কিন্তু চাই একটা নদী, আর পাহাড়ঘেরা উপত্যকা।

আমার মামাতো ভাইয়ের কর্মসূত্রে ডুয়ার্স চষে ফেলা। তার কাছেই শুনলাম প্রথম।
নাম তার লালিগুরাস।

চালসা পেরিয়ে মেটেলি ছেড়ে, সামসিংকে বাদিকে রেখে অল্প চড়াই আর অনন্ত চাবাগানের মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া সেই আঁকাবাঁকা রাস্তা।
সে এমন এক পথ, যার প্রতি বাঁকে রয়েছে মন ছুয়ে যাওয়া এক ফ্রেম।

IMG_20180624_112836_703.jpg

সামসিং পৌছে এক রাস্তা চলে গেছে সোজা ওপরে, পরবে সুনতেলেখোলা আর রকি island।
আর এক পথ চলে গেছে চা বাগান ভেদ করে দিগন্তের শেষে। যার শেষে রয়েছে লালিগুরাস।

আমরা যখন সামসিং পৌছলাম তখন বেলা গড়িয়েছে। দ্বিপ্রহরিক আহারের খোঁজে আমরা আগে গেলাম রকি island। রকি island একটি

IMG_20180623_205804_189

ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। কিছু হোমস্টে আছে যেখানে বললে ওরা খাবারের ব্যবস্থা করে দেবে।

আর রয়েছে মূর্তি নদী, পাহাড়ি ঝর্ণার মতো নেমে আসা। পা ছোয়ালে সেই ঠান্ডা জল মন ছুয়ে যায়।
রিনরিন করে বয়ে যাওয়া মূর্তি, আর দূরে কখন কোনো পাখির ডাক।
আর রয়েছে এক ভালোলাগা নিস্তব্ধতা।

বেলা গড়িয়ে পড়ছে আর আমরা এখনো আসল গন্তব্য থেকে দূরে।
রকি island কে বিদায় জানিয়ে আমরা নেমে এলাম লালিগুরাসে।

আগে পড়ে লালিগুরাস ভিউ পয়েন্ট। অধিকাংশ মানুষই ওখান থেকেই উপভোগ করেন নীচে বয়ে যাওয়া মূর্তি নদী ও পাহাড় ঘেরা উপত্যকা।

কিন্তু নীচে যাওয়ারও একটি চড়াই রাস্তা আছে। বড় গাড়ি না থাকলে অবিশ্যি সেটা একটু ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আমরা গাড়ি নিয়ে নেমে গেলাম। নদীর চড় থেকে দূরে গাড়ি রেখে, আমরা পাথুরে চড় পেরিয়ে এলাম নদীর বুকে।

কিছুক্ষণ আগে যে ছিল পাহাড়ি ঝর্ণা, এখানে সেইই বয়ে চলেছে নদীর মতো।
তীব্র বেগ আর অবিরাম পাথরের বুকে বেজে চলা জলের আওয়াজ।
চোখ তুলে দেখি জঙ্গল পেরিয়ে দূরে পাহাড়। একজন যেন একজনের কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে।

IMG_20180623_230316_918.jpg

চকিতে মনে হবে, আছে জল, কিছু শব্দ আর সেই নিস্তব্ধতা।
ভাষা নেই, আছে কিছু ছবি আর কিছু মুহূর্ত তুলে রাখা।

IMG_20180623_211947_073.jpg

জলের শব্দের স্রোতে কখন বিকেল সড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো। পড়ন্ত সূর্যের আলোর লুকোচুরি খেলা হতে থাকলো নুড়ি পাথরের বুকে। সে এক অদ্ভুত রঙের খেলা। সবুজে নীল জলে সোনালী পাথরের প্রতিচ্ছবি। আর দূরের পাহাড়ের গায়ে নামলো কুয়াশার চাদর।

IMG_20180623_171507-01.jpeg

নাহ, আর থাকা যাবেনা। অন্ধকারের আগে বেড়িয়ে পড়তে হবে। বলা বাহুল্য, পূর্ণিমার রাতে এই আলোর খেলা নিশ্চিত এক মায়াবি পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

ছেড়ে যেতে না চাইলেও, সে দিয়ে গেল এক রাশ ভাললাগার স্মৃতি।
শহুরে জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার এক নাম।
লালিগুরাস।

আবার দেখা হবে।
দ্রষ্টব্য – এখানে সব ছবি লেখকের সম্পত্তি। তার অনুমতি ছাড়া এর কোন প্রকার ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

2 thoughts on “নাম তার লালিগুরাস

    1. Dhyonobad kaku, amader lekha tar porar jonye aar apnar je bhalo legeche sei feedback dewar jonye. 🙂

      Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s