মুখোমুখি মগনলাল, আবার বৈঠকে।

যোধপুর পার্কের পাশে আমাদের সবুজ ফোর্ড গাড়ি এসে দাড়ালো।
দরজা খুলে নেমে এলাম আমরা।লালমোহনবাবু, ফেলুদা আর আমি।
এখানে শনিবার সন্ধেবেলা আমরা কেন এসেছি সেটা অবশ্য ফেলুদা বাদে কারোর কাছে পরিষ্কার নয়।
দুপুরবেলা একটা ফোন এসেছিলো, হয়তো তার সাথেই কোনো যোগ আছে।
একটা তেতলা বাড়ির দুটো ফ্লোর নিয়ে একটা ক্যাফে ‘আবার বৈঠক’।
সামনে বসার জায়গা। অনেক ধরণের বোর্ড গেম আছে।
ভেতরে ঢুকে অনেক বসার চেয়ার টেবিল, একুয়ারিয়াম আর নানা ধরনের বইয়ের সংগ্রহ। কেমন যেন ফেলুদার পছন্দ অনুযায়ী সাজানো।
নিচে লোকজনে গমগম করছে।
ওয়েটারকে তিন জনের টেবিল বলতেই ওপরের mezzanine ফ্লোরের দিকে যেতে বললো।

কাঠের সিঁড়ি ভেঙে উঠতেই কেমন যেন মাথাটা বন করে ঘুরে উঠলো। অনেক কিছুই চেনা লাগছে, অথচ যেন খাস কলকাতার বুকে বেমানান।
রঙিন আরশিওলা কাঠের দরজা। হাতল ঘুরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখি ফেলুদা থমকে দাড়ালো। পাশ দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম লালমোহনবাবুর মুখ ফ্যাকাশে।
চেয়ার টেবিল পেরিয়ে ধবধবে সাদা গাদ্দা তে বসে মগনলাল মেঘরাজ!IMG_20170520_192006_204

‘আসেন মিস্টার মিত্তের। আঙ্কেল, কাজিন আসেন। সবই আপনাদের জন্যে।’ চোখের সামনে সময়টা যেন চল্লিশটা বছর আগে চলে গেল।
ফেলুদা-মিস্টার মেঘরাজ, কেমন আছেন?
মগনলাল-চাল্লিশ সাল লাগল লেকিন হাল ছাড়েননি দেখছি মিস্টার মিত্তের।

বুঝতে পারলাম ফেলুদা কোথাও থেকে খবর পেয়েই এখানে এসেছে মগনলালের খোঁজে,
কিন্তু মগনলাল যে আমাদের জন্যে অপেক্ষায় থাকবে এটা আশা করেনি।

ফেলুদা-আপনার সাহস আছে। খোদ কলকাতার বুকে এরকম জায়গায় আপনার মতো ক্রিমিনাল কে পাবো সেটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
মগনলাল-মিস্টার মিত্তের, এতো বছর হয়ে গেলো, কিন্তু আপনি হামাকে বুঝতে পারলেন না। কার হিম্মত আছে যে ইটা ধরতে পারবে।
আপনিও তো এক্সপেক্ট করেননি যে হামি এখানে আপনার জন্য wait করবো!

ফেলুদার মুখে দেখলাম হালকা হাসি।
মগনলাল-ছাড়ুন ওসব কথা। দেখুন মেনু কার্ড আছে। যা মনপসন্দ আছে, অর্ডার করে লিন। আঙ্কেল, ডা ত্ৰিট ইজ অন মি।

মগনলাল ফোনে কাউকে কিছু বলতে শুরু করল।
মেনু কার্ডও অদ্ভুত। আমাদের সব পুরোনো দিনগুলো যেন তুলে ধরা।

নানা রকমের চা আর সঙ্গে ফিশ ফ্রাই, ফিঙ্গার, রকমারি ওমলেট, অনেক কিছুই আছে।
ঘরের ভেতরটা এবার দেখতে শুরু করলাম ভালো করে।

ডানদিকের কোনায় সেই বেনারসের ঘর থেকে আনা বিশাল ডার্ট বোর্ড।

লালমোহনবাবু দেখলাম এক চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছেন। সুখকর স্মৃতি নেই তার।

ওপরের দুকোনায় ঘুলঘুলি, ঠিক সেই বেনারসের ঘরের মতো।
অবাক কান্ড – দুটো বন্দুকের নল বেরিয়ে আছে ঘুলঘুলি থেকে। ফেলুদা দেখলাম সেটাও লক্ষ্য করেছে।

ফেলুদা ফিশ ফ্রাই আর মিট প্লাটার বলেছিল। দেখলাম সেগুলো তো এসেছে, সঙ্গে শরবত আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।
সেই শরবত।
লালমোহনবাবু ইতস্তত করছিলেন।
মগনলাল-আঙ্কেল, আজও ওতে বিষ নাই।

ফিশ ফ্রাইটা কেমন একটা লাগলো। হালকা গন্ধ আছে।pixlr_20170520164242150

ফ্রাইটা খেয়ে লালমোহনবাবুর মুখের অভিব্যক্তি দেখে মগনলাল কিরকম রেগে গেলো।

মগনলাল ওয়েটারকে ডেকে বেশ বকা দিলেন। ফিশ ফ্রাইটা দেখলাম এবার বদলে দিয়ে গেলো। এবার খেতে মন্দ না।
মিট প্লাটারটাও ভালো।
শরবতটা গলা দিয়ে নামার সময় প্রায় বিষম লাগার অবস্থা।

মগনলাল – তো মিস্টার মিত্তের, এবার কি করবেন, বোলেন?
ফেলুদা – সেবার পালিয়েছিলেন জেল থেকে। এবার সেটা হবেনা।
মগনলাল – হামি আপনাকে দেখে অবাক হলাম। আপনাদের কতো ভালো খাওয়ালাম। গল্প করলাম। খেলা দেখাবো আর আপনি পুলিশ আনছেন।
লালমোহনবাবু – ইয়া মানে। আবার খেলা কেন?
মগনলাল – আঙ্কেল জি, সবই তো খেলা। অর্জুন কে মনে আছে? তার বয়স এখন ১০২। কিন্তু নিশানা আজও সহি আছে। হবে নাকি আঙ্কেল জি?
ফেলুদা – একবার হয়েছে, আমার সামনে ওই নাটক আর হবেনা মিস্টার মেঘরাজ।
মগনলাল – আপনি আজও একটা কথা সমঝলেন না মিস্টার মিত্তের।
জোকার না থাকলে ব্যাটম্যান কি করবে?
ইউ কমপ্লিট মি।
কেউ বিশ্বাস করবেন না যে মগনলাল মেঘরাজ আজ যোধপুর পার্কে একটা ক্যাফেতে বসে থাকবে।

ফেলুদার কপালে ভাঁজটা জোরালো হচ্ছে। লালমোহনবাবুর মুখ শূন্য। আমার চোখ আবার ঘুলঘুলির দিকে।
আমরা উঠে পরলাম। মগনলাল গাদ্দা এ এলিয়ে বসলেন।

ফেলুদা – দেখা হবে মিস্টার মেঘরাজ।
মগনলাল – আই উইল বি ওয়েটিং মিস্টার মিত্তের।

পুনশ্চ:
খাবারের রিভিউয়ের সাথে বাকিটা আপাতদৃষ্টিতে কাল্পনিক।
কিন্তু নস্টালজিয়া ষোলোআনা।FB_IMG_1495278412946

দ্রষ্টব্য: ওপরের চরিত্রের ব্যবহার শুধুমাত্র এই কাফেতে আমাদের অভিজ্ঞতা লেখনীর জন্যে। কোনো প্রকার কমার্শিয়াল ব্যবহারের জন্যে নয়।

আপডেট:
আজ ২০শে মে আমরা হনুমান সংগঠন কিছু হনুমানের জন্মদিন পালন করতে ‘আবার বৈঠক’ এ যোগাযোগ করি। তারা জানায় যে তারা টেবিল রিসেরভেশন করেননা। আমাদের অনুরোধে তারা জানায় যে ২ ঘন্টা আমরা যদি ওখানে থাকি তাহলে মিনিমাম চার হাজার টাকার অর্ডার করতে হবে। যদিও আমরা তাদের বলি যে এক্ষত্রে তারা যদি সহযোগিতা করেন। কিন্তু তারা এই মিনিমাম অর্ডারের দাবিটি রাখেন। আমরা এই ক্যাফে তে শেষ ১ সপ্তাহে ২ বার গেছি এবং আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ৮ জন মানুষের খাবার এর খরচ ওই মিনিমাম এমাউন্টের কাছেই হবে। সে মতো আমাদের টেলিফোন মারফত টেবিল রেসেরভেশন হয়। উপরোন্ত আমরা একটি কেকেরও অর্ডার দি এবং তার অ্যাডভান্স PayTM মারফত দেয়া হয়। ওনারা এর পরেও বলেন যে আমরা যেন সন্ধ্যে ৬ টা নাগাদ আমাদের আসার কনফার্মেশন দিয়ে দি – যেটাও আমরা করি।

আমরা সন্ধে ৭.১৫ থেকে ওখানে ৩ জন বসে থাকি এবং খাবার অর্ডার দিয়ে দি। অন্য টেবিল ও খালি ছিল, তখন এবং পরে।  বাকিরা সবাই পরের আধ ঘন্টার মধ্যে যোগ দেয় এবং আরও খাবার অর্ডার দেয়া হয় পরের ২ ঘন্টা।

আমাদের তখন আরও অর্ডার করা বাকি এবং আড্ডা জমে উঠেছে, এমন সময় ক্যাফে ম্যানেজার (নাম এখানে গোপন রাখছি) এসে সর্ব সমক্ষে জানায় যে আমাদের বিল তখন অ্যারাউন্ড ২৮০০ টাকার হয়েছে যেটা মিনিমাম অর্ডার ৪০০০ এর কম।

আমরা অত্যন্ত হতচকিত হয় কারণ আমাদের অর্ডার শেষ হয়নি এবং আমরা বিল ও চাইনি। হঠাৎ এরকম আচরণের কারণ জানতে চাইলে ভরদ্রলোক বারবার সেই টেলিফোন এর কথা তুলে ধরেন।

এ সব কিছুই হয় বাকি কাস্টমরদের সামনে।

তাকে বার বার বলা সত্বেও যে আমাদের খাওয়া বাকি এবং এই ভাবে এই প্রসঙ্গে তুলে আনা যে কাস্টমারের অপমান, তা সত্ত্বেও ভদ্রলোক এই প্রসঙ্গে কথা বলে যান। অবশেষে বাধ্য হয়ে আমরা জায়গা ছেড়ে উঠে যাই।

ভদ্রলোক এটাও স্বীকার করেন যে আমাদের জন্যে কোনো কাস্টমার কে ওনারা ফেরত পাঠাননি এবং আমরা পুরো ২ ঘন্টায় অনবরত খাবার অর্ডার করে গেছি।

বিল পায়েমেন্টের সময় দেখা যায় যে ওনার এই অপব্যবহারের সময় আমাদের খাবার বিল এমাউন্ট ছিল ২৮০০ + ৪৫০ (কেক) = ৩২৫০। ওনাকে মনে করিয়ে দেয়া হয় যে আমাদের তখন বেরিয়ে যাওয়ার কোনো প্ল্যান ছিল না কারণ আমরা আরও এক রাউন্ড খাবার আর চা-কফি অর্ডার দেয়া বাকি ছিল।

আখেরে ক্ষতি তা ওনাদের কারণ কিছু অনুরাগী এই ক্যাফে তা হারালো।

ওপরের গল্পটা মূলত আমাদের আগেরবারের ভালো অভিজ্ঞতা থেকে লেখা আর এই আপডেটটি আজকের অত্যন্ত অপমানজনক অভিজ্ঞতা।

Abar Baithak Menu, Reviews, Photos, Location and Info - Zomato

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s