পুজোর গল্প ২ | বাড়ি থেকে পালিয়ে

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: মূল ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। একান্ত মালিকানা ছবির স্রষ্টার – Debasis Deb। আমরা কেবলমাত্র কাহিনীর জন্যে ব্যবহার করেছি।

৩৫টি বসন্ত কাটিয়ে ফেলার পর আজ যখন নিজের বেটার-হাফ অভিযোগ করেন “খালি ঘরেই পড়ে রইলে। কি করলে জীবনে!”, তখন নিজেকে কিঞ্চিৎ Sacred Games এর নওয়াজ সাহেবকে মনে হয়। Daring কিছু করছেন কি?

তাই এই পুজোর স্মৃতি রোমন্থনে আবার নিয়ে যাচ্ছি আমার ছেলেবেলায়।

ঘটনা বা দুর্ঘটনা যাই বলুন, ঘটেছিল ৯৭ সালে। আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। সূত্রপাত সেই নিউ অলিপুরের আমাদের হাউসিং।

এতদিন অবধি পুজোর দিনগুলো বন্ধুদের সাথেই কাটাতাম। হাউসিং এর পুজো মন্ডপে। তার বাইরে বন্ধুদের সাথে ঠাকুর দেখতে যাওয়া মনে ওই সাহাপুরের পেছনে দু-তিনটে পাড়ার পুজো দেখা। ওই টুকুই ছিল আমাদের সবার permissible লিমিট।

১৩ কিংবা ১৪ বছরের গন্ডিটা বেশ গোলমেলে। হিসেব কিছুতেই মেলে না। মা-বাবা যদি বলেন ২+২ মানে ৪, কিন্তু ওই যে বললাম, সময় ও বয়েসটাই বেশ ঘটমট। প্রমাণ যদি করা যায় যে হিসেবটা হবে ৫, তাহলে?

এরকমই এক পুজোর ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় আমাদের প্লান হলো এবার বেড়া ভাঙতে হবে কিন্তু সন্তর্পনে। এমন ভাবে যাতে কেউ কিছু না জানতে পারে।
সেইমতো কাজ। সবাই যে যার বাড়িতে জানালো যে অষ্টমীর বিকেলে আমরা সবাই যাবো বেহালায় বীরেন রায় রোডের পুজো দেখতে। যা ভাবছেন, তাই। সৌরভ গাঙ্গুলীর বাড়ির কাছে পুজো দেখতে। সেটা শুনে কারোরই বাবা মা বিশেষ আপত্তি জানায়নি। প্ৰথম ধাপ পেরোনো গেল। নির্ভীগ্নে।

সপ্তমী সারাদিন আর অষ্টমীর সকাল কেটে গেল, আমাদের পুজো পরিক্রমার যাত্রাপথ চূড়ান্ত করতে। কোন পথে বেহালার দিকে বেড়িয়ে, মাঝরাস্তা থেকে তারাতলা পৌছে কি করে আমরা যাবো যোধপুর পার্ক, বাবুবাগান, মুদিয়ালির ঠাকুর দেখতে। হাত-খরচা আমরা সবাই পেয়েছিলাম। কিরকম?

তখন ৫ টাকায় ৩৭ নম্বর বাসে অথবা যাদবপুর-পূর্বাচল মিনিবাসে করে ঢাকুরিয়া বেশ পৌঁছে যাওয়া যেত। হ্যা, ঠিক তাই।
অষ্টমীর বিকেলে প্লান মাফিক কাজ হলো। সবাই কোনো বিপত্তি ছাড়াই বাসে উঠে পরলাম। গন্ত্যব যোধপুর পার্ক সার্বজনীন। বাড়ির সবাই জানলো আমরা আছি বাড়ির কাছেই বেহালার রাস্তায়।

সময় যখন বেহিসেবি তখন প্রথম বাড়ি থেকে পালিয়ে বন্ধুদের সাথের সময় জ্ঞান কিছু ছিলোনা। নিজেদের খেয়ালে হইহুল্লোড় করতে করতে আমরা গেলাম তারপর সেলিমপুর পল্লীতে। তারপর বাবুবাগান। এত অবধি ঠিকই ছিল। তখন রাত ৮টা।মোবাইল ফোনের বহু সময় আগে। তখন সবার ঘরে ল্যান্ডলাইন ফোনও ছিল না। তাই…

বাবুবাগান দেখার পরে আমাদের প্লান ছিল মুদিয়ালি পৌঁছানোর। মনে আছে ঢাকুরিয়া থেকে ব্রিজ পেড়িয়ে সাউদার্ন এভিনিউ ধরে হেটে গেছিলাম। কতক্ষন লেগেছিল মনে নেই। রাস্তাও চিনতাম না। কিন্তু গেছিলাম। হাল ছাড়িনি।
কিন্তু সেটা গল্প নয়। আসল কাহিনী অন্য জায়গায়। আমাদের এক বন্ধুর রাত জেগে ঠাকুর দেখার প্লান ছিল এর সাথে। তাই বাবুবাগান দেখে এবং রাত ৮টা বাজে দেখে সে বাড়ি ফিরে গেছিলো। অত্যন্ত নিরীহ ঘটনা। আপাত দৃষ্টিতে।

ফিরে আসি আমার চোখে বাকি ঘটনাতে। মুদিয়ালি দেখে যখন বাড়ি ফেরার বাসে উঠি,তখন রাত প্রায় ১০টা। দুরন্ত সময়ের শেষে পৃথিবী যেন ঝড় নিয়ে এলো আমাদের সাহসিকতার অভিনন্দন হিসেবে। বাইরে এলোমেলো হাওয়া। মন পরিতৃপ্ত। অভিযান সফল।

কবি বলেছেন – ছোট গল্প যাহা, শেষ হইয়াও শেষ হইলনা। তাই বাকি ছিল আমাদের অভিযানের যবনিকা। বাস এসে দাড়ালো বাস স্টপে। নেমে দেখি আমার পিতৃদেব দন্ডায়মান। সঙ্গে বাকিদের বাবা-মা ও দাঁড়িয়ে।

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বজ্র-বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা। না, এটা আকাশের অবস্থা নয়। আমার বাবার অভিব্যক্তি।

বাকিটা যা মনে রয়ে গেছে যে বাস স্টপ থেকে হাউসিং এর মণ্ডপ পেড়িয়ে ঘর অবধি, there was only one constant। বাবার আমার কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে আসা।

বাকি পুজো? বারান্দায় বসে তিনতলা থেকে নিচের প্যান্ডেল দেখা। আরো ঘরময় অনেক মেলোড্রামা।

কিন্তু আমাদের প্রায় নির্ভূল প্লান ছিল, এরকম পরিণতি ঘটলো কি করে! পরে জানা যায়, যে বন্ধুটি আগে বাড়ি ফেরত এসেছিল, তার সাথে পূজা মন্ডপে আমার বাবার দেখা হয়। বাবা জিজ্ঞেস করেন তাকে সে এখানে কি করছে। প্রত্তুরে সে ইতিহাস বলে ফেলে। অতএব…

যাইহোক, মন কিন্তু শান্ত হয়নি।
বিদ্রোহের স্বাদ পেয়েছিলো সে।
২১ বছর পর আজ সেই সন্ধ্যার কথা ভেবে অনেক ছোট মুচকি হাসি উঁকি দিয়ে যাচ্ছে।

কথায় আছে, সবই ফেরৎ আসে। আমার হনুমানটি যে কি করবে, তাই ভাবছি।

ইতি,
সেই ছোট্ট হনুমানের বাবা।

পুজোর গল্প সিরিজে প্রথম কিস্তি পড়ুন – পুজোর গল্প ১| পুজো প্যান্ডেল আর ছেলেবেলা

6 thoughts on “পুজোর গল্প ২ | বাড়ি থেকে পালিয়ে

  1. Chhotto Honuman Jai koruk….Baba Honuman nishchoi aar hir hir Kore take tene Bari niye jaabe na….khub bhalo laglo pore….onekei hoyto nijeder chhotobela r sathe mil khuje paaben

    Liked by 1 person

    1. অনেক ধন্যবাদ। নাহ, তার বাবা এরকম করবেই না। ভালো লাগলে প্লিজ share করুন। 😁

      Like

  2. Rahul ,
    Khub enjoy korlam , fire gelam shei bandhuder sathe chotobelar puja dekhar experience e ar mone mone visualize korlam kemon na bole dure puja dekhar anando -bodhoi shobari jibane ei episode thake – tar por shei jhar, kintu anando ta to kore felechi – tar jonye jai shasti pai na keno .Tokhon amra hete hete puja dekhtam, babubaganer puja , selimpur palli etc ekdom relive korlam ,baba ma biswas i korto khanik ta , kintu ki ar kora boyostai orokom as u said
    Onek kajer modhye eta pore ekdom refreshed hoye gelam

    Liked by 1 person

    1. অনেক ধন্যবাদ দেবশ্রীদি। share করো নিজেদের circle এ। 😁

      Like

Leave a comment